শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

বাংলাদেশ থেকে সেনাবাহিনী উঠিয়ে দেয়া হোক

পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশ নিজেদের প্রতিরক্ষার দিকে মনযোগী। তাই বেশীরভাগ দেশের সেনাবাহিনী রয়েছে এবং ওসব দেশ তাদের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে সামরিক শক্তিধর দেশগুলো বিশ্বের অর্থনীতি ও রাজনীতির কলকাঠি নাড়ে। কিন্তু অবাক হলেও সত্য যে পৃথিবীর অনেক দেশে সেনাবাহিনী নেই। প্রশ্ন আসতে পারে - ওসব দেশে বহিঃশত্রুর আক্রমণ ঠেকানোর উপায় কি ? 
উত্তরঃ ঐ দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষা নিয়ে চিন্তিত নয়। তারা অন্যান্য দেশের সাথে বিভিন্ন চুক্তি ও আন্তঃসম্পর্কের মাধ্যমে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে। সেই দেশগুলো হল - আইসল্যান্ড, পালাউ, কোস্টারিকা, ভ্যাটিক্যান সিটি, ডোমিনিকা, পানামা ইত্যাদি। জানি এগুলো এত বিখ্যাত দেশ নয়। এসব দেশের নামও হয়ত অনেকে জানে না। কিন্তু এ দেশগুলো প্রমাণ করে দিয়েছে যে সেনাবাহিনী ছাড়াও স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব। আমরাও এরকম করতে পারি, সেনাবাহিনী উঠিয়ে দিয়ে ভারত শ্রীলঙ্কা, রাশিয়া এদের সাথে আন্তঃসম্পর্কের মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা সুনিশ্চিত করতে পারি। সেনাবাহিনীর পিছনে অযথা টাকা নষ্ট না করে অন্যান্য খাতে ব্যয় করতে পারি। যেমন - শিক্ষা খাত, গবেষণা খাত, যুব উন্নয়ণ, বেকার সমস্যা নিরসন ইত্যাদি।
অনেকে হয়ত বলবেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতার পরও অনেক সেনাসদস্য তাদের বীরত্বের জন্য বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অবদানের কথা কেউ অস্বীকার করছে না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে তো ছাত্রলীগেরও ব্যপক অবদান ছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের ভূমিকা অবদান ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তার মানে কি এই যে এখনও াত্রলীগের প্রয়োজন আছে ? একমাত্র ছাত্রলীগ কর্মী ছাড়া কোন পাগলেও স্বীকার করবে না যে বর্তমান বাংলদেশে ছাত্রলীগের কোন প্রয়োজন আছে। ছাত্রলীগের কুকীর্তির কথা আর বর্ণনা করলাম না। আপনিও জানেন, ছাত্রলীগ নিজেও জানে, সারা বাংলাদেশ জানে। তবু দশটা ছবি দিলাম যেন একথা বলতে না পারেন যে আমি ফাঁকা দাবী করছি।  ......ছবি...। বাংলাদেশ থেকে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির সব উঠিয়ে দেন। ছাত্র রাজনীতির কোন অস্তিত্বই থাকার দরকার নাই।  

পক্ষে যুক্তিঃ মাথাব্যথা করলে যেমন মাথা কেটে ফেলা যায় না। ঠিক তেমনি সেনাবাহিনীর কিছু খারাপ কাজের জন্য সেনাবাহিনী উঠিয়ে দেয়া যায় না।
বিপক্ষে যুক্তিঃ সম্মত। তবে মাথার প্রয়োজন না থাকলে তো মাথা বাদ দেয়া যায়, নাকি ? আমি সেনাবাহিনীর অপরকর্মের জন্য বাংলাদেশ থেকে সেনাবাহিনী উঠিয়ে দিতে বলছি না। বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নাই বিধায় উঠিয়ে দিতে বলেছি।  আপনার হাতে একটা অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে যদি বলা হয় আপনার শত্রুকে খুন করতে। আপনি কি পারবেন ? পারবেন না। এই মানসিকতা এত সহজে তৈরি হয় না। অনেক প্রশিক্ষণ ও অমানুষিক পরিশ্রমের পর তৈরি হয়। নিশ্চিতরূপে হত্যা করতে পারাটা কোন সুস্থ মানসিকতার পরিচয় না। এত প্রশিক্ষণ ও অমানুষিক পরিশ্রম করে এরকম অসুস্থ মানসিকতা তৈরি করার দরকারটা কি ? হত্যা বা খুন করার মানসিকতা মন থেকে ধুয়ে মুছে সাফ করে ফেলতে হবে।

আমাদের দেশের সেনাবাহিনী যতই শক্তিশালী হোক, ভারত যদি আক্রমণ করে তবে এক সপ্তাহর মধ্যে বাংলাদেশ দখল করে ফেলতে পারে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামর্থ্য নেই এই আক্রমণ ঠেকানোর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু মায়ানমারের সাথেই টক্কর দিতে পারবে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের উপর যেহেতু মায়ানমারের নজর আছে সেহেতু সেনাবাহিনী একেবারে উঠিয়ে দেয়ার বিকল্প হিসেবে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে বেশীরভাগ সেনা মায়ানমার সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হোক। আর বাকি সেনাদের বিডিআরদের মত সীমান্তে বসিয়ে দেয়া হোক। তাহলে বর্ডার পারাপার নিয়মমাফিক হল কিনা সেটা দেখা যাবে এবং চোরাচালানও বন্ধ করা যাবে।

পক্ষে যুক্তিঃ দেশের অভ্যন্তরীন অনেক ব্যাপারেও সেনাবাহিনীর প্রয়োজন আছে। আগুন লেগেছে ? বন্যা হয়েছে ? বিল্ডিং ভেঙেছে ? রাস্তা তৈরি করতে হবে ? লেক বানানো লাগবে ? ফ্লাইওভার বানানো লাগবে ? স্বচ্ছ ভোটার লিস্ট লাগবে ? এসব সেনাবাহিনী ছাড়া অসম্ভব।
বিপক্ষে যুক্তি:  কে বলেছে অসম্ভব ? অবশ্যই সম্ভব। পুলিশ প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করলে পুলিশও স্বচ্ছ ভোটার লিস্ট বানাতে পারে। পুলিশদেরও আর্মিদের কাছাকাছি ট্রেনিং দিলে তারাও বন্যার্তদের সাহায্য করতে পারবে, ভাঙা বিল্ডিং এর ধ্বংসস্তুপ থেকে আটকে পড়া মানুষজনকে উদ্ধার করতে পারবে। আমি বলছি না যে সেনাবাহিনী দেশ ও জনতার সেবায় কাজে লাগে না। অবশ্যই লাগে কিন্তু যেসব কাজে লাগে ওসব কাজ পুলিশ দিয়েও করানো যায়।
পক্ষে যুক্তিঃ আফ্রিকার কিছু দেশে শান্তি মিশনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রসংশনীয়। এর ফলে আফ্রিকার দেশের মানুষ বাংলাদেশের সংস্কৃতি সমন্ধে জানতে পেরেছে, বাংলা ভাষা শিখছে, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া শিখছে। আফ্রিকার একটা দেশ সিয়েরালিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষাই হল বাংলা। এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর শান্তিমিশনের জন্য। যাদের জন্য অন্য একটা দেশ তাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা করেছে, তাদের দেশ থেকে উঠিয়ে দেয়া কি উচিত হবে ?

বিপক্ষে যুক্তিঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবদান রাখার পরেও যেখানে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী থাকা উচিত না, সেখানে আপনি আছেন অন্য দেশ নিয়ে। বাঙালি সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষা অন্য দেশে দ্রুত ছড়িয়ে দেয়ার আরো ভালো উপায় আছে। ভাল মানের বাংলা ছবি বানিয়ে দুই তিনটা অস্কার যেতা। তবে বিদেশীরা বাংলা সিনেমা দেখতে আগ্রহী হবে এবং বাঙালি সংস্কৃতির প্রেমে পড়ে যাবে।

পক্ষে যুক্তিঃ সেনাবাহিনী না থাকলে আমাদের দেশে অশান্তি ও অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হবে। আমাদের জলসীমা আমেরিকা পাহারা দিবে। যুদ্ধ লাগলে ভারতের কাছে হাত পাততে হবে, ছোট হতে হবে। তাছাড়া রোগ হবার আগে তো ওষুধ খাবার দরকার না থাকলেও আমরা ঘরে জ্বরের ওষুধ, ডায়েরিয়ার ওষুধ রাখি। ঠিক সেরকমই যুদ্ধ না লাগলেও সেনাবাহিনীর দরকার আছে।
বিপক্ষে যুক্তিঃ সেনাবাহিনী না থাকলে আমাদের দেশে অশান্তি ও অস্থিতিশীল অবস্থা কেন তৈরি হবে ? কোন অশান্তি বা অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হবে না। বাংলাদেশের জলসীমা বিডিআর পাহারা দিবে, আমেরিকা নয়। যুদ্ধ লাগলে এমনিতেও আমাদের ভারতের কাছে হাত পাততে হবে, সেনাবাহিনী থাকুক আর না থাকুক। বাংলাদেশের লক্কর ঝক্কর সেনাবাহিনী দিয়ে কোন যুদ্ধ লড়া সম্ভব নয়। এমনিতেও পৃথিবী থেকে যুদ্ধ জিনিসটা উঠে যেতে বসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন অধিভূক্ত দেশগুলোকে দেখেন না ? তারা কি সুন্দর সমঝোতা ও চুক্তি বজায় রেখে চলে। আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যা সমাধান করে। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো কেন ওদের মত হতে পারি না ? আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ''আন্তর্জাতিক সম্পর্ক" নিয়ে তো পড়াশুনা করি নাই। তাই এ ব্যাপারে আমার কোন জ্ঞান নাই। তবু চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি ? পাকিস্তানকে ১৯৭১ এর জন্য ক্ষমা চাইতে বলা হোক। ক্ষমা চাইলে ওরা সার্কভুক্ত দেশগুলোর সাথে থাকতে পারবে, নইলে বাদ। বাসায় আগে থেকে ওষুধ রাখবেন কেন ? ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ ক্রয় বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

জানি, লেখাটা আপনার কাছে বুদ্ধি ও বিবেকবর্জিত মনে হচ্ছে, হয়ত হাসিও পাচ্ছে। নতুন আইডিয়ার কথা শুনে সাধারণত মানুষের হাসিই পায়। মানুষ নতুনকে সহজে গ্রহণ করতে পারে না। পঞ্চাশ বছর বা একশ বছর লেগে যায় নতুন আইডিয়ার মর্ম বুঝতে। আর্মি পুরোপুরি উঠিয়ে না দিলেও আর্মির ক্ষমতা পুলিশের চেয়েও কমিয়ে দেয়া হোক। অশিক্ষিত ও অল্প-শিক্ষিত লোকদের হাতে এত ক্ষমতা থাকা উচিত নয়। আর্মিতে কারা যোগ দেয় ? যারা দেশের সেবায় নিজেদের জীবন নিয়োজিত করতে চায়, তারা ? জ্বী না। যারা লেখাপড়ার হাত থেকে বাঁচতে চায়, তারা আর্মিতে যোগ দেয়। যারা এইচএসসি পরীক্ষার পর ভাবে তাদের দিয়ে আর পড়াশুনা হবে না, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার মত মেধা নাই কিন্তু অমানুষিক শারিরীক পরিশ্রম করার মত শক্তি আছে তারাই আর্মিতে যোগ দেয়। দেশপ্রেম একটা অজুহাত মাত্র।
এখন হয়ত বলবেন, ''সেনাবাহিনীর লং কমিশন্ড অফিসারেরা সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি B.Sc পড়েন এবং ওসব অফিসারদের মধ্যে যারা বিভিন্ন টেকনিক্যাল কোরে ( ই.এম.ই ইঞ্জিনিারস, সিগন্যালস ) যান, তাদের পরবর্তীতে বুয়েট বা এমআইএসটি তে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশুনা করতে হয়। তাহলে ? এখনও কি বলবেন আর্মিরা অশিক্ষিত ?"
এখন প্রশ্ন চলে আসে - যদি কিছু অফিসারের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ভীতি বা অনাগ্রহ নাই থাকে তবে আর্মিতে যোগ না দিয়ে সাধারণ লাইনে লেখাপড়া করতে সমস্যা কি ? আর্মিতে যোগ দেবার প্রয়োজন কি ? 
আর্মিতে এ ধরণের লোক দরকার।
তাতে তোমার কি ? তুমি কেন আর্মিতে এ ধরণের লোক যোগান দিবে ?
অথবা, দেশের তো আর্মির প্রয়োজন নাই।
 জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাস কোর্স আর বিএসসি কোর্স কি সমমানের ? নিশ্চয়ই না। অবশ্যই পাস কোর্স নিম্নমানের। ঠিক সেরকম, সামরিক লাইনের শিক্ষাও নিম্নমানের। এমনকি সামরিক অফিসারদের মধ্যে যারা উচ্চশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার। তাদের সমস্ত শিক্ষা ম্লান হয়ে যায় একটা সাধারণ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। সাধারণ ইঞ্জিনিয়ার তার জ্ঞান ও মেধা দিয়ে দেশের উপকারে আসে। ইঞ্জিনিয়ার আর্মির জ্ঞান ও মেধা শুধুমাত্র আর্মির নিজস্ব কাজ ছাড়া দেশের কোন উপকারে আসে না। আর বাংলাদশে আর্মির কোন প্রয়োজন নাই। তাই মাননীয় প্রধাণমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ, বাংলাদেশ থেকে সেনাবাহিনী উঠিয়ে দিন অথবা আর্মির ক্ষমতা পুলিশের চেয়ে কমিয়ে দিয়ে তাদের সীমান্তে পাঠিয়ে দিন এবং বিডিআর বানিয়ে দিন।
 














কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন