বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২০

মানুষের মাথা ঠান্ডা করুন

বাংলাদেশের মানুষের মাথা এত গরম কেন ? আমি বুঝিনা। একটু থেকে একটুতেই ফাঁসী চেয়ে বসে থাকে। ২০১৮ সালে এক কাঠমিস্ত্রী ফেসবুকে প্রধাণমন্ত্রী, জাতির জনক, জিয়াউর রহমান এবং কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ অপমান করেছিল। যাদের অপমান করছে তারা মানহানির কেস করলে নাহয় কাঠমিস্ত্রীকে গ্রেফতার করা মানাইত, কিন্তু যাদের অপমান করছে তাদের খবর নাই। পুলিশের এত লাগল কেন ? রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কি পুলিশের আত্মীয় নাকি ? তানাহলে পুলিশের এত জ্বলবে কেন ? পুলিশ তাকে কেন গ্রেফতার করল ? একজনের সম্মানহানি হলে আরেকজন তার হয়ে কেস করতে পারবে কেন ? এই অন্যায় আইন পরিবর্তন করুন। যার মানহানি হয়েছে, শুধু সেই কেস করবে। তো যখন ঐ মিস্ত্রী ও পুলিশের স্বাক্ষাৎকার you tube এ release হয়েছে। তখন সেই ভিডিওগুলোর নিচে মানুষ কমেন্ট করে ফাঁসীর দাবীর জানাচ্ছে। কাউকে অপমাান করার জন্য মৃত্যুদন্ড বা ফাঁসী চাওয়া প্রমাণ করে দেয় বাংলাদেশের মানুষ কি পরিমাণ উগ্র। তারপর ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ এক ছাত্রীকে নকলের অভিযোগে টিসি দিতে চাওয়ায় সেই ছাত্রী আত্মহত্যা করছে। সাথে সাথে রামছাগলের দল you tube video এর কমেন্টে সেই অধ্যক্ষের ফাঁসী চাওয়া শুরু করছে। মাথা খারাপ নাকি পেট খারাপ ? কিছু হলেই ফাঁসী, কিছু হলেই ফাঁসী। কিছুদিন পর দেখা যাবে আম চুরি করলেও ফাঁসীর দাবি জানানো হচ্ছে। যত্তোসব। ঐ ছাত্রীর নামে একটা স্মারক তৈরি করে তার প্রতি যথার্থ সম্মান দেখানো যেত। যদ্দিন ভিকারুন্নেসা স্কুল থাকবে ( একশ বছর বা দুইশ বছর ) তদ্দিন সেই মেয়েকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হবে। এভাবে তাকে মৃত্যুর পর অমর করে রাখা যেত না ?
বাংলাদেশের মানুষ মাত্রাতিরিক্ত আবেগী। বৃদ্ধ থেকে শিশু সবাই আবেগের চোটে বিবেক হারিয়ে উল্টোপাল্টা সব দাবী জানিয়ে বসে। লঘু পাপে গুরুদন্ড চেয়ে বসে। যেখানে গুরুপাপে লঘুদন্ড দেয়া উচিত।
আইনকে কঠোর করা যাবে না। মৃত্যুদন্ড তুলে দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা থেকে মৃত্যুদন্ড তুলে দেবার জন্য আজ অব্দি কোন দাবী জানানো হয়নি। কারণ, এই বিধানের প্রতি দেশের জনগোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ জনমত আছে। যে দেশে ছোটখাট অপরাধ, এমনকি অপরাধ না হলেঐ স্রেফ অনুভূথতিতে আঘাত লাগার জন্য সাধারণ মানুষ মৃত্যুদন্ডের দাবী জানায় সেই দেশে মৃত্যুদন্ডের আইন তুলে দেয়া অনেক কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। ধর্ম অবমাননার জন্য দন্ডের বিধান তুলে দেয়াটাও অসম্ভব নয়।
সরকারের দায়িত্ব জনগণের সেবা করা। জনগণের মন রক্ষা করা নয়। মাননীয় প্রধাণমন্ত্রী এটা আপনি বেশ ভাল করেই বুঝেন। তানাহলে সকল পরিবেশবাদী ও সাধারণ মানুষের দাবী উপেক্ষা করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বানাবার সিদ্ধান্ত নিতেন না। খোদ জাতিসংঘ যেখানে বলেছে - রামপালে বিদুৎকেন্দ্র বানালে পরিবেশে চরম ক্ষতি হবে। অথচ আপনি কারোর কথায় কর্ণপাত না করে ঠিকই আপনার সিদ্ধান্তে অটল আছেন। আপনি মনে করেন, ''বাংলাদেশের মানুষ  নিজেদের ভাল বুঝে না। তাই দেশের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের ভাল করতে হবে।"
আমি অন্তর থেকে আপনার এই চিন্তা সমর্থন করি। আপনার চিন্তা সঠিক। আসলেই দেশের মানুষ নিজেদের ভাল বুঝে না। তাই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের উপকার করতে হবে। কিন্তু আপনার সঠিক চিন্তাটি আপনি ভুল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছেন। সঠিক চিন্তা সঠিক ক্ষেত্রে ( ধর্ম অবমাননা ও কঠোর আইন দূরীকরণ ) প্রয়োগ করুন, ভুল ক্ষেত্রে ( বিদ্যুৎকেন্দ্র ) প্রয়োগ কইরেন না।
তথাকথিত ধর্মানুভূতিতে আঘাতের আইনত অধিকার দিলে এবং মৃত্যুদন্ডের মত কঠোর আইনগুলো বাতিল করলে বাংলাদেশের জনগণ হয়ত মনে কষ্ট পাবে কিন্তু এতে তো তাদের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। তাই না ? কিন্তু রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বানালে পরিবেশের ক্ষতি হবেই। পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে ultimately মানুষেরই ক্ষতি হবে। মানুষ পরিবেশের চেয়ে বড় নয়। পরিবেশ মানুষের চেয়ে বড়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের ভাল না বুঝলেও এই একটা ক্ষেত্রে ঠিকই বুঝে।
আর বাংলাদেশের মানুষের অনুভূতি কেয়ার করার দরকার নাই। মানুষের ব্যক্তিগত অনুভূতির মূল্য আছে কিন্তু সমষ্টিগত অনুভূতির মূল্য অনেক কম। কিসের ভিত্তিতে এটা বললুম ? অনুভূতি মাপার কোন যন্ত্র না থাকলেও এটা common sense যে, সবাই একসাথে মনে কষ্ট পেলে সেই কষ্ট সবার মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। ফলে প্রত্যেকে আলাদাভাবে তেমন কষ্ট পায় না।  ...  Am I right ? Or, am I right ? 



যেমন কয়েক বছর আগে BCS পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া সুশান্ত পালের ফেসবুক status এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপমান হয়েছে মনে করে কিছু বলদ সুশান্তকে ক্ষমা চাওয়ানোর দাবীতে আন্দোলন করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এককালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হত। আপনি ঈংল্যান্ডে গিয়ে আসল অক্সফোর্ডকে গালি দিলেও সেখানকার কোন শিক্ষার্থী আন্দোলন করবে না। বাংলাদেশের মানুষ হল হুজুগে। বেশীরভাগ মানুষের মতের সাথে মেলে না, এমন কিছু মুখ থেকে বের করলেই হল। পাগল জনতা ''ক্ষমা চাও'', ''ক্ষমা চাও'' বলে আকাশ ফাটিয়ে ফেলবে। বাংলা সিনেমার নায়ক ওমর সানি ঈদে কোরবানীর পিছনে টাকা খরচ না করে গরীব অসহায় মানুষের মাঝে অর্থ বিতরন করতে বলেছিলেন। সাথে সাথে পাগল জনতা ক্ষমা চাওয়ার দাবীতে আওয়াজ তুলছে। টিভি অভিনেতা মোশারফ করিম এক অনুষ্ঠানে বলেছিল, ''মেয়েরা যেমন খুশি ড্রেস পড়বে। তাদের ড্রেস তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। অন্য কারোর এক্ষেত্রে কিছু করার নাই।"  সাথে সাথে পাগল জনতা তাদের প্রিয় অভিনেতাকে ক্ষমা চাওয়ানোর দাবীতে চিল্লাপাল্লা শুরু করছে। বাংলাদেশের মানুষ পাগলামী করবেই। আপনি এত বুদ্ধিমান হয়ে যদি বাংলাদেশের মানুষের পাগলামীকে প্রশ্রয় দেন।  তাহলে হবে ?

কোন ব্যক্তি ( সুশান্ত পাল বা ওমর সানি বা মোশারফ করিম ) যদি কোন সম্প্রদায়, কোন প্রতিষ্ঠান বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা ধর্ম বা আপনার বাবা মায়ের অবমাননা করে তবে উক্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা চাইতে না বলে আগে কারণ জানতে চাইতে হবে যে কেন তার কাছে অমুক সম্প্রদায়কে বা প্রতিষ্ঠানকে বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে বা ধর্মকে বা আপনার বাবা মাকে অবমাননার যোগ্য মনে হল ?
কিন্তু আফসোস যে কেউ কারণ জানতে চায় না।

মাননীয় প্রধাণমন্ত্রী, আপনার দায়িত্ব শুধু মানুষের সেবা করা, মানুষের মন রক্ষা করা নয়। আর সেবা করা বলতে শুধু জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করাই বুঝায় না। সেবাা বলতে মানুষের মন মানসিকতা উন্নত করাও বুঝায়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে কারণ জানতে চাওয়ার প্রবনতা গড়ে তুলতে হবে। তাদের অন্ধ আবেগের প্রভাব থেকে মুক্ত করে যুক্তিবাদী হওয়া শেখাতে হবে।

 ভোট হারানোর ভয় পাইয়েন না। নাহয় কয়েক লক্ষ মানুষ আপনাকে ভোট না দিল, ক্ষতি কি ? তবু আপনি পরবর্তী নির্বাচনে জিতবেন। নির্বাচনে আপনার পরাজয় অনেকটা সূর্য পশ্চিম দিকে উঠার মত। কিন্তু কয়েকশ বছর পর যখন বাংলাদেশের মানুষের চিন্তাভাবনা আধুনিক হবে, তখন তারা বাংলাদেশের অতীত প্রধাণমন্ত্রীর ( আপনার ) এই সময়ের চেয়ে advanced পদক্ষেপ নেয়ার কথা স্মরণ করে আপনাকে রীতিমত পূজা করবে। বর্তমান মানুষের কাছে হিরো হবার চেয়ে ভবিষ্যতেরর মানুষের কাছে হিরো হওয়াটা বেশী কার্যকর। এখন যদি আপনি বর্তমানকালের ব্যাকডেটেড মানুষদের সাথে তাল মিলিয়ে চলেন তবে ভবিষ্যতের মানুষের কাছে আপনি খারাপ শাসক এবং সর্বোপরি খারাপ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত হবেন। বুঝাতে পেরেছি ?























কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন