বৃহস্পতিবার, ২ আগস্ট, ২০১৮

ভৌত বাস্তবতা বনাম সামাজিক বাস্তবতা


বাস্তবতা দুই ধরণের। যথা - ভৌত বাস্তবতা ও সামাজিক বাস্তবতা। বলা হয়ে থাকে যে, বিজ্ঞানীরা সাধারণত কল্পনাপ্রবণ, বাস্তবজ্ঞানহীন এবং ভাবুক প্রকৃতির হয়ে থাকে। কথাটা অনেকটা সত্যি কিন্তু পুরোপুরি না। সেটা বুঝতে হলে সবার আগে বুঝতে হবে সামাজিক বাস্তবতা কাকে বলে ? পরীক্ষার রেজাল্ট ভাল না হলে অর্থাৎ সার্র্টিফিকেটে ভাল মার্ক না থাকলে ভাল চাকুরি জুটবে না, ভাল চাকুরী না জুটলে বউ ঘরে তোলা যাবে না - এই হল সামাজিক বাস্তবতা। আর ভৌত বাস্তবতা কি ? সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী মঙ্গল বৃহস্পতি প্রভৃতি গ্রহসমূহ উপবৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তমান, আবার পরমাণুতে প্রোটন ও নিউট্রনসমৃদ্ধ নিউক্লিয়াসের চারপাশে ইলেকট্রনসূহ বিভিন্ন শক্তিস্তরে ঘূর্ণায়মান থাকে - এগুলো হল ভৌত বাস্তবতা। মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কথাই ধরা যাক। সাধারণত মানুষ কি করে ? আগে চাকুরী যোগাড় করে, তারপর বিয়ে করে আর এরও পরে গিয়ে সন্তান নেয়। আর আইনস্টাইন কি করেছে। যা করেছে তা পুরোই উল্টা। প্রথমে ভালবাসার আবেগে প্রেমিকাকে গর্ভবতী করে ফেলছে, তারপর বিয়ে করছে এবং সবশেষে চাকুরী যোগাড় করছে। এমনিতে আইনস্টাইনের সাথে অন্য দশজন হতভাগ্য যুবকের কোন পার্থক্য নাই, যে কিনা অর্থের অভাবে বউ-বাচ্চা নিয়ে বিপদে পড়েছিল। এ থেকে কি এটাই প্রমাণিত হয় না যে, আইনস্টাইন একজন বাস্তবজ্ঞানহীন মানুষ ? কিন্তু পরের অবস্থা বড়ই বিচিত্র। ক্ষুদ্রাদিক্ষুদ্র অণু পরমাণুর জগত থেকে শুরু করে অসীম মহাকাশের অপার রহস্যের চাবিকাঠি যেন আশীর্বাদ হয়ে আইনস্টাইনের মাথায় এসে ভর করছে। ১৯০৫ সালের তাঁর তিনটা অসাধারণ গবেষণাপত্র চিরপরিচিত দুনিয়া সমন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই শুধু বদলে দেয়নি, বাস্তবতার স্বরূপও উন্মোচন করেছে। সে দেখিয়েছে যে, আলোর কাছাকাছি বা সমান বেগে ভ্রমণ করার সময় বাস্তবতা কি বিচিত্র হয়েই না ধরা দেয়; যদিও সেরকম বেগ তোলা এখন পর্যন্ত আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় নাই তবে তুলতে পারলে যে কি ঘটবে সেটা আমরা সবাই জানি বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে। কাল দীর্ঘায়ন, দৈর্ঘ্য সংকোচন, ভর বৃদ্ধি এসব অদ্ভূত ব্যাপার স্যাপার ঘটে সেই মহাজাগতিক গতিসীমাকে স্থির রাখবে অর্থাৎ কিছুতেই আলোর চেয়ে বেশী বেগে যাওয়া সম্ভব না। মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল ''নক্ষত্রের তাপ এবং উজ্জ্বলতার কারণ কি ?'' আইনস্টানের আপেক্ষিক তত্ত্ব হতে প্রাপ্ত মহান সমীকরণ E=mc^2 এই প্রশ্নের উত্তর দেয়। ভর m পরিণত হয় শক্তি E তে, যেখানে c = আলোর বেগ। আমরা সাধারণ ক্ষেত্রে ভরের সৃষ্টি বা বিলুপ্তি অবলোকন করি না, একারণেই ভরের নিত্যতা সূত্রের উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় ভরের সৃষ্টি ও বিনাশ হয়। আর তারার অভ্যন্তরে এই নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়াই ঘটে। ইহাই হইল মহাকাশের প্রতিটি তারার শক্তি উৎপাদনের মূলকথা। তো, ইহা কি বাস্তবতা নয় ? অবশ্যই এটা বাস্তবতা। তাহলে, কেন আমরা আইনস্টাইনকে বাস্তবজ্ঞানহীন বলব ? হতে পারে যে, সামাজিক বাস্তবতা সমন্ধে সে উদাসীন, এতটাই উদাসীন যে ...... একটা ঘটনা বলা যাক, একবার ট্রেনের টিকিট চেকার আইনস্টানের টিকিট হারিয়ে গেছে দেখে তাঁকে বলল যে তাঁর টিকিট লাগবে না। আর আইনস্টাইন সাথে সাথে বলে উঠল, '' অবশ্যই টিকিট লাগবে, তানাহলে আমি বুঝব কিভাবে যে আমি কোথায় যাচ্ছি ?'' কিন্তু সেই আইনস্টাইনই আবার ভৌত বাস্তবতার একেবারে গুরুদেব যাকে বলে। তো আসল কথা যেটা বুঝাতে চাচ্ছি, সেটা হল সামাজিক ক্ষেত্রে বাস্তবজ্ঞানহীন মানুষকে কখনো বাস্তবজ্ঞানহীন বলে অবহেলা বা ঠাট্টা করা উচিত নয়, কে জানে? ভৌত বা্স্তবতার ক্ষেত্রে সে হয়ত Superstar ও হতে পারে। OK ?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন