শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৪

সপ্নকথন

বেশকিছু খাতা, কলম, সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর, গণিত - পদার্থবিজ্ঞান আর বাংলা সাহিত্যের ( Specially শিশু-কিশোর সাহিত্য ) বই সমৃদ্ধ একটা লাইব্রেরী, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট Connection যুক্ত একটা Desktop Computer, থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা, সুন্দর একটা বউ আর কোন একটা মানমন্দিরে ( Observatory ) জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে চাকুরী.....ব্যস ; জীবনে এর চেয়ে বেশী আর কে কিই বা চাওয়ার আছে ! যেহেতু আমি একজন অসামাজিক মানুষ, মানমন্দিরে Job পেলে সেটাই আমার জন্য perfect. মানমন্দিরগুলো সর্বদা লোকালয় থেকে, সমাজ থেকে অনেক দূরে হয় কেননা, মানমন্দিরগুলো লোকালয়ে অবস্থিত হলে আলোকদূষণর কারণে সেগুলোর বিশাল বিশাল টেলিস্কোপ দিয়ে রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ করতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অনেক সমস্যা হয়; তারা, নক্ষত্র, উল্কা, ধুমকেতু, গ্রহ, উপগ্রহ, গ্যালাক্সি প্রভৃতি মহাজাগতিক বস্তু পর্যবেক্ষণ করার জন্য নির্জন জায়গার বিকল্প নাই। ধরা যাক, আমি লোকালয় থেকে ২ কি ৩ কিলোমিটার দূরে অথবা কোন দ্বীপে কোন মানমন্দিরে চাকুরী নিয়ে সেখানেই বসবাস করতে লাগলাম, সেখানে থেকেই গবেষণা করব। সঙ্গে থাকবে একজন অনুপ্রেরণাদায়িনী স্ত্রী যার ভালবাসা এবং অনুপ্রেরণায় আমি সফল পুরুষে পরিণত হব ( প্রত্যেক সফল পুরুষের পিছনে একজন নারীর অবদান থাকে, এটা তো জানা কথা ) আর থাকবে একজন বিশ্বস্ত চাকর যার কাজ হবে মাঝে দূরে শহরে গিয়ে খাবার-দাবারসহ জীবনধারণে প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে নিয়ে আসা এবং এর পাশাপাশি ঘরের কাজ করা। That's enough for me. ছোট্ট জীবনে এর চেয়ে বেশী আর কিই বা চাওয়ার আছে। আর আমার Wife ও যদি Physics বা Astronomy বা Math এ তিনটার একটাতেও দক্ষ হয়, আর কি লাগে ? Husband-Wife দুইজন একসাথে মিলেমিশে গবেষণা করা যাবে। কিন্তু এরকম মেয়ে জোগাড় করাই তো tuff, যে কিনা আমার মত অসামাজিক ব্যাক্তির সাথে adjust করে চলতে পারবে, যে কিনা জনবসতি থেকে দূরে আমার সাথে থাকতে পারবে, যে কিনা আমার দুর্বলতা না হয়ে আমার শক্তি হবে, আমি গবেষণা করার সময় electricity চলে গেলে সে মোমবাতি নিয়ে আমার সামনে বসে থাকবে যাতে আমার গবেষণায় কোন ব্যাঘাত না ঘটে, প্রাচীনকালের মহাকাশপ্রেমীদের মত রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে আমি যেন গর্তে পড়ে না যাই সেজন্য সর্বদা সে আমার হাত ধরে আমার সাথে চলবে; যে কখনো আমার কর্মের অন্তরায় না হয়ে সহায় হবে। আজকালকার মেয়েগুলো শুধু সফল পুরুষের পিছনেই দৌড়ায়, একজন অসফল পুরুষকে ( আমার মত ) ভালবাসা দিয়ে অনুপ্রেরণা দিয়ে সফল বানাবে, এরকম মহিয়সী নারী পাওয়াই যায় না।
Jurasik Park 3 সিনেমাতে ঐ সিনেমার নায়ক Sam Neill একটা অসাধারণ কথা বলে। কথাটা হল, ‘‘দুনিয়াতে দুই ধরণের মানুষ আছে যাদের সাথে জগতের অন্য কোন মানুষের তুলনা হয় না, এরা হল Astronaut ( নভোচারী বা মহাকাশচারী ) এবং Astronomer ( জ্যোতির্বিজ্ঞানী বা মহাকাশবিজ্ঞানী )। Astronomer হল সেই ব্যাক্তি যে কিনা অসাধারণ জিনিস যেমন- গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, উল্কা, ধুমকেতু, কৃষ্ণগহ্বর প্রভৃতি নিয়ে গবেষণা করে কিন্তু সম্পূর্ণ নিরাপদ জায়গায় (পৃথিবী) থেকে। আর Astronaut ঐসব বিপজ্জনক জায়গায় গিয়ে অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরে অন্য গ্রহ-উপগ্রহে গিয়ে পদার্পণ করে, নতুন জীবন তথা নতুন সভ্যতার সন্ধান করে। এদের দুজনেই Special.’’ আমারও ব্যাক্তিগতভাবে মনে হয়, ‘‘আইনস্টাইন এবং নীল আর্মস্ট্রং কেউই সম্মান ও মর্যাদায় কারোর চেয়ে কম যায় না।’’ Astronaut হতে হলে প্রয়োজন হয় সাহস আর Astronomer হতে গেলে লাগে মেধা। যদি আমি মনে করি যে আমার মধ্যে দু’টাই বিদ্যমান, তাহলে ? এখন কথা হল ‘‘যে আমার সম্পর্কে যা খুশি ভাবুক গে, আমার কাছে তো আমিই Best, আমার দৃষ্টিতে তো আমিই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, তাই না ?’’ কি নভোচারী আর কি জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমি তো দু’টাই হতে চাই। তবে যদি কেউ আমার কাছে এসে এরকম বলে, ‘‘হয় তুমি Astronaut হতে পারবা নয়ত Astronomer। দুইটার যেকোন একটা। আমি তোমাকে প্রথম মানুষ হিসেবে মঙ্গল গ্রহের মাটিতে পদার্পনের সুযোগ দিই, তবে তোমাকে কথা দিতে হবে যে তুমি মহাকাশ নিয়া গবেষণা করবা না অর্থাৎ জ্যোতির্বিজ্ঞানী হইবা না। আর যদি জ্যোতির্বিজ্ঞানী হও, তাহলে তুমি নভোচারী হওয়ার চান্স পাইবা না। এখন তুনি ঠিক কর যে তুমি কি হতে চাও? Astronaut নাকি Astronomer ?’’ সেক্ষেত্রে আমি কোনকিছু চিন্তাভাবনা না করে বলব, ‘‘I want to be an astronaut, because I love adventure more than research’’ বাংলাদেশে যদি Astronomy বিষয়টা থাকত, আমি কস্মিনকালেও Physics নিতাম না; কিন্তু বাংলাদেশে Astronomy নাই, Astrophysics ও নাই। কি আর করা ? এইজন্যই বাধ্য হয়ে Physics নিয়ে পড়ছি। আমাদের কলেজেরই এক শিক্ষিকার ( নাম বলব না ) কাছে একবার ফিজিক্সের কোন একটা টপিক বুঝতে গেছিলাম। তা তিনি আমাকে বললেন, ‘‘অত বুঝে কি করবা, মুখস্ত করে ফেল; পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করাটা তো বেশী জরুরী তাই না ? ধর যে, তুমি সব বুঝলা কিন্তু পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে পরলা না, তাইলে কি লাভ ?’’আমি তখন তাকে বললাম, ‘‘এমনটা কি হওয়া সম্ভব না যে, যেই শিক্ষার্থীটা Year final পরীক্ষায় সর্বোচ্চ রেজাল্ট করছে, পুরো বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম হইছে সে জীবনে কিছুই করতে পারল না শুধুমাত্র ফিজিক্সের টিচার হওয় ছাড়া বা সে হয়ত টিচারও হল না পদার্থবিদ্যার মত মহান বিষয়ে পড়ে সে হয়ত ব্যাঙ্কে চাকুরী করতে লাগল আর যে শিক্ষার্থী Year final পরীক্ষায় সবগুলো course এ ফেল করে একেবারে অনিয়মিত হয়ে গেল সেই দেখা গেল যে পরবর্তীতে ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ পেয়ে বসে আছে।’’ এই কথা শুনে তিনি বললেন, ‘‘অসম্ভব। সার্টিফিকেটে ভাল মার্ক না থাকলে তোমাকে কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করার সুযোগ দিবে না, তুমি কোন গবেষণা করতে পারবা না। তখন ? গবেষণা করার চান্স না পেলে তুমি কিভাবে আবিস্কার করবা ?’’ আমি এর উত্তরে বলতে পারতাম, ‘‘ম্যাডাম, গবেষণা করতে গবেষণাগার লাগে না, আইনস্টাইন যখন তাঁর বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব দিছিল, আলোক তড়িৎ ক্রিয়া ব্যাখ্যা করছিল এবং ব্যাখ্যা দিয়েছিল ব্রাউনিয়ান গতির তখন সে কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করত না, কাজ করত একটা পেটেন্ট অফিসে।’’ কিন্তু আমি এটা বললাম না, কে জানে কি মনে করে বসে ? এনারা শুধু বিজ্ঞান জানে, বিজ্ঞানের ইতিহাস জানে না। আমার নিজেরও কিছু সমস্যা আছে, সেটা হল আমার পুঁজি অনেক কম। ইন্টারে থাকতে আমার পড়ালেখা করতে একদম ভাল লাগত না, মনে ইচ্ছা ছিল ক্রিকেটার হওয়ার এবং এর পাশাপাশি সাহিত্যিক হওয়ার। বিজ্ঞানী হওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিল না। ভাবছিলাম HSC পরীক্ষার পর পড়ালেখা ছেড়ে দিব। ক্রিকেটার হতে হলে পড়াশুনা করা লাগে না, শুধু ইংরেজীতে কথা বলতে পারলেই হইছে; আর সাহিত্যিক হতে হলেও অত বেশী শিক্ষিত হতে হয় না, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি এমন ঘোড়ার ডিম পড়াশুনা করছে ? কে জানত ? HSC পরীক্ষার পর আমি Astronomy (জ্যোতির্বিজ্ঞান বা মহাকাশবিজ্ঞান) এর প্রেমে পড়ে যাব ? কিন্তু তদ্দিনে যা ক্ষতি হও্য়ার হয়ে গেছে। GPA কম হওয়ার কারণে অনেক ভর্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষাই দিতে পারি নাই এবং ইন্টার থেকে অনেক কম জ্ঞান অর্জন করার কারণে অর্থাৎ পুঁজি কম হওয়ার কারণে, প্রায়ই টিচারদের মুখে শুনতে হয় যে আমার তো অমুক ব্যাপারটা ইন্টারেই শিখে আসা উচিত ছিল, এখন নতুন করে কেন শিখতে হচ্ছে। এর উত্তরে আমি শুধু এটুকুই বলি, ‘‘স্যার/ম্যাডাম, আপনি যখন কাউকে কোন বিষয়ে বুঝাবেন, তখন আপনি এটা কক্ষনো আশা করবেন না যে সে ঐ বিষয়ে আগে থেকে কিছু শিখে আসছে; কাউকে কোন বিষয়ে বুঝানোর সময় সে কিচ্ছু পারে না, কিচ্ছু বুঝে না এমনটা ধরে নিয়েই তাকে বুঝানো উচিত।’’ আমি আমার ক্লাসের তুলনায় যতটা জ্ঞানী হওয়া উচিত ছিল ততটা জ্ঞানী নই, এর কারণ ইন্টারের অবহেলা। এইজন্য বর্তমানে আমার অন্যদের চেয়ে বেশী পরিশ্রম করতে হচ্ছে, অনেক পুরোনো জিনিস নতুন করে শিখতে হচ্ছে। সেইজন্য আমার টিচারদের আন্তরিকতাপূর্ণ সহযোগীতা প্রয়োজন, অবহেলা বা টিটকারী নয়। আর আমি কম জ্ঞানী বলে, কম মেধাবীও হব – এমনটা ভাবার কোন কারণ নাই। তবে হ্যা, একটা কথা সত্যি যে, ‘‘একজন জিনিয়াস যতক্ষণ পর্যন্ত সফল না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ তাঁকে পাগল ভাবে; আর যখন কোন পাগলও সফল হয়ে দেখায়, সাধারণ মানুষের কাছে সে জিনিয়াস হয়ে যায়।’’ যতক্ষণ পর্যন্ত আমি কোন কিছু আবিস্কার করে দেখাতে না পারছি বা পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে না পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমার কথা কেউ গুরুত্বসহকারে শুনবে না। মুসা ইব্রাহীম যদ্দিন পর্যন্ত এভারেষ্ট জয় করে নাই তদ্দিন পর্যন্ত কেউ তার কথা শুনে নাই, সে অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াইছে, অনেক অবহেলা তার কপালে জুটছে; কিন্তু যখন সে এভারেষ্ট জয় করে দেখাইছে....... ......। মুসা ইব্রাহীম যখন অসফল ছিল, তখনও তার পাশে তার স্ত্রী ছিল যার অনুপ্রেরণা না পেলে হয়ত সে এই অসাধ্য সাধনই করতে পারত না। আমার পাশে তো কেউ নাই আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়ার মত। তাহলে, আমি তারপরও আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি সফল হওয়ার জন্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন