শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৪

ঘনিষ্ঠতার ভাইরাস

এর আগে অনেকে বিখ্যাত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বিখ্যাত ব্লগ ‘‘মুক্তমনা’’ তে ''বিশ্বাসের ভাইরাসের'' কথা শুনে থাকবে। বিশ্বাসের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ব্যাক্তি বুঝতে পারে না যে কোনটা Right আর কোনটা Wrong ? কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায় ? ন্যায়-অন্যায় কোন কিছু বিচার-বিবেচনা না করে বিশ্বাসের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ব্যাক্তি অবিশ্বাসী কাফের ব্যাক্তিদেরকে হত্যা করাকে নিজের ইমানী দায়িত্ব বলে মনে করে এবং করেও। টুইনটাওয়ারে বিমান হামলা, রমনার বটমূলে বোমা হামলা কিংবা ব্লগার রাজীব হত্যা এসব কর্মকান্ডের জন্য দায়ী ব্যাক্তিগণ বিশ্বাসের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। সে যাই হোক, আমি নতুন ধরণের এক ভাইরাসের কথা বলতে যাচ্ছি। সেটা হল ঘনিষ্ঠতার ভাইরাস। এ ভাইরাসটা কিরকম ? Suppose, আমার সাথে আমার কোন বন্ধু ( ধরা যাক নাম হল x ) এর ঝগড়া লাগল। আমরা মিটমাটের জন্য আমাদের দুজনেরই অন্য কোন বন্ধু y এর শরণাপন্ন হলাম। দেখা গেল যে, y বন্ধুটি x এর সাথেই বেশী ঘনিষ্ঠ। তাতে কি হবে ? y কখনোই চিন্তা করে দেখবে না বা বুঝার চেষ্টা করবে না যে, আমাদের মধ্যে কে right আর কে wrong ? কে ন্যায়ের পথে আছে আর কে অন্যায়ের পথে আছে ? কে সঠিক ? আমি নাকি x ? - এটা কখনোই y বুঝার চেষ্টা করবে না অথবা বুঝতে পারলেও এটা নিয়ে মাথা ঘামাবে না, সে কোন কিছু বিচার-বিবেচনা না করে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু x কেই Support করবে। ইহাই হইল ঘনিষ্ঠতার ভাইরাস। আবার ধরা যাক, আজ থেকে অনেক বছর পরের কোন দিন। আমার মেয়ে হয়ত তখন কলেজে পড়ে, যাকে তার ক্লাসের কোন একটা ছেলে পছন্দ করে। কিন্তু আমার মেয়ে ছেলেটাকে পছন্দ করে না। ছেলেটা আমার মেয়ের মন জয় করর চেষ্টা করছে, তার পিছন পিছন ঘুরছে। আমার মেয়েটি বিরক্ত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমার জায়গায় অন্য কোন লোক থাকলে কি করবে ? নিজের মেয়ের প্রতি মমতায় অন্ধ হয়ে ঐ বিরক্তকারী ছেলেটাকে মাইর দিবে বা হুমকি দিবে বা ক্রোধান্বিত চিত্তে এ ধরণেরই কিছু করার চেষ্টা করবে। কারণ, ঐ ঘনিষ্ঠতার ভাইরাস ( যেটা দ্বারা আমি মোটেও আক্রান্ত নই )। সে কখনোই ঐ ছেলের অর্থাৎ তার মেয়ের প্রেমিকের মন বুঝার চেষ্টা করবে না বা তার হয়ে নিজের মেয়েকে বুঝানোর চেষ্টা করবে না। লোকটি always নিজের মেয়ের হয়েই কথা বলবে মেয়ের প্রেমিকর সাথে। কারণ, তার সহজ যুক্তি - ''মেয়েটি আমার সন্তান। তাই আমার শুধু তার দিকটাই কি দেখা স্বাভাবিক না ? আমি কেন ঐ ছোকরার দিকটা দেখার চেষ্টা করব ? ওই পোলা আমার কি লাগে ?'' এই তো Problem. আমরা নিরপেক্ষভাবে কোনকিছু চিন্তা করতে পারি না, নিরপক্ষভাবে কোন কিছু বিচার করতে পারি না। 99% ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠতার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হই, যার কারণে আমাদের চিন্তা - বিচার সবকিছুই একপক্ষীয় হয়। যখন দুইপক্ষের মধ্যে বিচার করতে হয়, তখন জরুরী না যে সবসময় একপক্ষ সঠিক এবং আরেক পক্ষ ভুলই হবে। দুইপক্ষই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সঠিক হতে পারে, আবার একপক্ষ right এবং আরেক পক্ষ wrong ও হতে পারে। যেটা আমাদের উচিত সেটা হল সর্বদা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা এবং ঘনিষ্ঠতার ভাইরাসের প্রভাবমুক্ত হওয়া। আমি কখনো উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে ঘনিষ্ঠতার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হব না, নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করে দেখব যে ঐ ছেলেও তো কারো না কারো সন্তান। আমি শুধু আমার সন্তানের Feelings টা বুঝব, তা হতে পারে না। অপরের সন্তানেরও Feelings ও আমাকে বুঝতে হবে। যদি সেই ছোকরা বখাটেও হয়, তাহলে আমি আমার মেয়েকে বলব, ‘‘তুমি ওকে বল যে যদি সে ভাল পথে ফিরে আসতে পারে, তবে তুমি তার সাথে সম্পর্ক করতে রাজী আছ। খারাপকেও তো ভাল পথে ফিরিয়ে আনা যায়, তাই না ? যেহেতু তুমি অন্য কাউকেও ভালবাস না, তো চান্স দিয়ে দেখতে দোষ কি ? কে জানে ? হয়ত তোমার ভালবাসা পাওয়ার জন্য সে ভালও হয়ে যেতে পারে।’’ পাঠকগণ অবাক হলে কিছু করার নাই, কথা হল যে, আমি অত্যন্ত উদার মনের মানুষ, কিন্তু অবশ্যই অবিবেচক না যে নিজের সন্তানকে যার তার হাতে তুলে দিব। আমি সকলের প্রতিই সমান ভালবাসা এবং মমতা অনুভব করি। একটা পিপড়াও যদি কখনো আমার পায়ের চাপে মারা যায়, তার জন্য আমি কাঁদছি – এরকম রেকর্ডও আছে। HSC পরীক্ষার সময় প্রাণীবিজ্ঞান Practical এর দিন তেলাপোকার ব্যবচ্ছেদ হইছিল এবং আমি তেলাপোকাগুলোর জন্য কষ্ট পাইছিলাম। এ কথা পড়ে হয়ত অনেকের হাসি পাচ্ছে, কিন্তু সর্বনিকৃষ্ট থেকে শুরু করে সর্বোৎকৃষ্ট সকল জীবের প্রতি আমার প্রেম আছে, হয়ত মানুষের প্রতি প্রেম এবং পশুপাখির প্রতি প্রেম সমান নয় কিন্তু প্রেম তো অবশ্যই আছে। আমি এরকমই, পরমকরুণাময়। সবাইকেই ভালবাসি, কিন্তু কখনোই ভালবাসার খাতিরে অন্ধ হয়ে যাই না, কখনোই ঘনিষ্ঠতার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হই না। কখনোই না। Never. আর কারো হওয়া উচিতও না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন