রবিবার, ২০ জুলাই, ২০১৪

হায়রে মহাপুরুষ


ভিনসেন্ত ভ্যান গখ একজন ওলান্দাজ চিত্রশিল্পী। রুক্ষ সৌন্দর্য এবং আবেগময় সততার প্রকাশ এবং সপ্রতিভ রং ব্যবহারের কারণে তার চিত্রকর্ম বিখ্যাত হয়েছিল এবং বিংশ শতাব্দীর শিল্পকলায় সদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু যখন তিনি বেঁচে ছিলেন, তখন তাঁর চিত্রকর্মকে একমাত্র তিনি নিজে ছাড়া কেউ দাম দিত না, এমনকি তাঁর নিজেরও কোন মূল্য ছিল না তৎকালীন জনসাধরণের কাছে। হোটেলে ড্রিঙ্ক করার পর যখন তিনি পয়সা দিতে পারতেন না, তাঁর অমূল্য painting বিক্রি করতে চাইতেন। কিন্তু কেউ তার আঁকা ছবি কিনতে চাইত না। তার সময়ের কারোর কাছেই তাঁর আঁকা ছবি ভাল লাগত না। সাধারণ মানুষ তাকে পাগল ভাবত, ছোট ছেলে-মেয়েরা তাকে দেখলে পাথর ছুড়ে মারত। দীর্ঘ হতশা, বিষন্নতা তাঁকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল; যার দরুণ এই মহান মানুষটি 1890 সালের জুলাই মাসের 29 তারিখ মাত্র 37 বছর বয়সে আত্মহত্যা করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁর শিল্পকর্ম নিলাম করা হলে অতি উচ্চমূল্য পাওয়া যায়। তাঁর আঁকা বেশ কিছু ছবি পৃথিবীর সবচেয়ে দামী শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে গন্য করা হয়।

একটা ইংরেজী Science fiction tv serial ''Doctor Who'' তে ঐ সিরিয়ালের প্রধাণ চরিত্র Doctor তার টাইম মেশিনে করে অতীতে গিয়ে চিত্রকর ভিনসেন্তের সাথে দেখা করে এবং কিছু সময়ের জন্য তাঁকে বর্তমানে নিয়ে আসে এটা দেখানোর জন্য যে আজ তাঁর paintings এর কিরকম কদর হচ্ছে ? ফ্রান্সের এক জাদুঘরে ইতিহাসের সবচয়ে অসাধারণ চিত্রকর্মগুলো দেখানো হচ্ছিল, একজন লোক দর্শনার্থীদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভিনসেন্তের paintings দেখাচ্ছিলেন। সেই লোককে যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে ভিনসেন্ত সমন্ধে তার ধারণা কি, তখন তিনি বলেন, ''ভিনসেন্ত ভ্যান গখ হলেন পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্রকর। উনার রং চালনা অসাধারণ। উনি তাঁর জীবনের ব্যাথাকে রূপ দিয়েছেন আনন্দময় সৌন্দর্যে। ব্যাথাকে কবিতায় রূপ দেয়া যত সহজ, ছবিতে রূপ দেয়া অত সহজ নয়। হয়ত এরকমটা আগে কেউ কখনো করেতে পারেনি। আমার দৃষ্টিতে ভিনসেন্ত ভ্যান গখ শুধুমাত্র সর্বশ্রেষ্ঠ আর্টিস্টই নয়, তিনি পৃথিবীতে যত মহাপুরুষ আসছে তাদের মধ্যেও একজন।'' .................এই কথা শোনার পর time travel করে আসা ভ্যান গখ নিজেকে আর আটকাতে পারে নাই, কাঁদতে কাঁদতে জাদুুঘরের সেই লোকটাকে জড়িয়ে ধরছে এবং ধন্যবাদ জানিয়েছে। আমি পর্যন্ত এই দৃশ্য দেখে কেঁদে দিছি।
 আগে অনেক সামাজিক সিনেমা দেখে আমর চোখে জল আসছে, কিন্তু কোনদিন যে Science fiction দেখেও আমার চোখে জল চলে আসবে এটা আমি সপ্নেও ভাবতে পারি নাই। কিন্তু এটা তো just একটা টিভি সিরিয়াল। যদি সত্যি সত্যি এরকম করা যেত। পৃথিবীর সেই সমস্ত স্মরণীয় ব্যক্তি, জীবিত অবস্থায় যাদের ভাগ্যে অবজ্ঞা, ঘৃণা, নিন্দা, অপমান আর অবহেলা ছাড়া কিছুই জোটে নাই কিন্তু মৃত্যর পর তাদের পায়ের ধুলা মাথায় নিতে পারলে মানুষ নিজেকে ধন্য মনে করে এমনই মহামানব বনে গেছে তারা। এদের সবাইকে যদি টাইম মেশিনে করে কিছুক্ষণের জন্য বর্তমানে নিয়ে এসে দেখানো যেত যে আজ তারা জনমানুষের মনে কোন অবস্থানে আছে, তাহলে হয়ত মৃত্যুর পূর্বে তাদের যন্ত্রনা খানিকটা হলেও কম হত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন