শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৪

আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না

কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না। যখন ছোট ছিলাম, মন্দিরে গেলে দেবতার মূর্তির সামনে মাথা একেবারে মেঝেতে লাগিয়ে প্রণাম করতাম। দেবতা বা দেবীর কাছে প্রমাণ করার চেষ্টা করতাম যে দেখ আমি তোমার কত বড় ভক্ত, তুমি আমাকে যদি কৃপা না করো তো আর কাকে করবা ? ঐগুলাকে যেগুলা মাথা মেঝেতে ঠেকায়নি ? সেগুলোকে যেগুলো স্রেফ দাঁড়িয়ে থেকে হাত কপালে ঠেকিয়ে তোমাকে প্রণাম করছে? Never. তুমি অবশ্যই আমাকে বেশী কৃপা করবা কারণ আমি তোমাকে অপেক্ষাকৃত বেশী ভক্তি করি। আশেপাশের মানুষজন ভাবত আমি বুঝি খুব ধার্মিক। আমি নিজেকেও তাই মনে করতাম। প্রতিদিন স্নান করে গীতা পাঠ করতাম। কিন্তু ঐসময় কে জানত পরবর্তীতে সেই আমি......... থাক এখন বলব না, পরে বলব। ধীরে ধীরে ভগবানের প্রতি আমার শ্রদ্ধা, বিশ্বাস কমতে লাগল। কিভাবে ? wish পূরণ না হওয়ার মধ্য দিয়ে। পিচ্চিকালে যা wish করতাম, যা প্রার্থনা করতাম তাই মোটামুটি বেশীরভাগই পূরণ হয়ে যেত। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে অবস্থার অবনতি ঘটতে লাগল। ধীরে ধীরে এমন অবস্থা হল আমি যা wish করি তাই আর পূরণ হয় না, বরং wish না করলে অর্থাৎ প্রার্থনা না করলে অনেক সময় ইচ্ছা পূরণ হয়ে যায় কিন্তু প্রার্থনা করছি কি সেই ইচ্ছা আর কখনোই পূরণ হয় না। এমন একটা সময় আসল যখন আমি যাই অমঙ্গল আশঙ্কা করি, তাই সত্যি হয়ে যায়। Suppose, আমি পরীক্ষা ভাল দিছি, রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। কিন্তু তারপরও রেজাল্ট খারাপ হয়ে যাবে। কেন ? ঐ যে, আমি আশঙ্কা করছি, ''যদি খারাপ হয়''। আর ভগবানের তো এই এক বদঅভ্যাস যে আমি যা অমঙ্গল আশঙ্কা করব সে তাই সত্যি পরিণত করে দেখাবে, তা সেই অমঙ্গল আশঙ্কা সত্যি হওার সম্ভাবনা যত কমই হক না কেন। তারপরও আমি ভগবানের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা হারালাম না; ভাবলাম হয়ত সে আমাকে পরীক্ষা করছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটল, মানে কি বলব ? আমার জীবনের সবচেয় বড় ট্র্যাজিডি ঘটে গেল, সেই ঘটনায় আমি যেরকম দুঃখ পাইছি সেইরকম দুঃখ আর কখনো পাই নি। আর দুঃখটা পাইছি আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে। মাঝে মাঝে টিভির খবরে বা পত্রিকায় এমন ঘটনা শুনতে বা পড়তে পাওয়া যায় বৈকি যে বাবা-মা ই তার সন্তানকে কারো কাছে বেঁচে দিছে টাকার আশায়। আমার বাবা-মা আমাকে কারোর কাছে বেঁচে দেয় নাই, কিন্তু প্রায় এর কাছাকাছি একটা কাজ করে বসছে আমার সাথে যার কারণে আমি তাদেরকে আর ভালবাসি না। যারা নিজের সন্তান সম্পর্কে এত বড় সিদ্ধান্ত সন্তানকে জিজ্ঞাসা না করেই নিতে পারে তারা আর যাই হোক কখনোই কারোর বাবা-মা হইতে পারে না, Parents নামের কলঙ্ক। আমার ভাবতেও লজ্জা হয় যে আমি এমন একটা নিচু মানসিকতা সম্পন্ন দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেছি। ছিঃ ছিঃ। এখন কেউ কেউ আছেন যারা এমনটা মনে করেন যে, ''পিতা-মাতা সন্তানের সাথে যাই করক না কেন, সন্তানের কখনোই তাদেরকে ঘৃণা করা উচিত না। After all, তারা তো সন্তানের ভালই চায়, তাই না ? হ্যা এটাও ঠিক যে তারা সবসময় বুঝে উঠতে পারে না যে কিসে সন্তানের ভাল, কিসে খারাপ, কিসে মঙ্গল আর কিসে অমঙ্গল। ফলে না বুঝে বোকার মত মঙ্গল করতে গিয়ে অমঙ্গল করে বসে কিন্তু তাও বাবা-মা ই তো। তাই, তাদের ক্ষমা করে দেয়া উচিত।'' আমি এরকম চিন্তাধারী মানুষদের সাথে সম্পূর্ণরূপে দ্বিমত পোষণ করছি। সে যাই হোক, তখন আমি ভাবলাম ইশ্বরের মত পরমকরুণাময় সত্ত্বার অস্তিত্ব যদি সত্যিই থেকে থাকে তবে সে কি করে আমার সাথে পরম নিষ্ঠুরের মত আচরণ করতে পারল ? How ? এই দার্শনিক চিন্তা থেকেই একসময় আমি ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হয়ে গেলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন