শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৪

না বলা কথা ৩

রামায়ণ, মহাভারত হিন্দুদের দুটি ধর্মগ্রন্থ। এই দুটি মহাকাব্য তথা ধর্মগ্রন্থ নিয়ে কত যে টিভি সিরিয়াল হয়েছে তা আর কহতব্য না। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ভারতীয় টিভি চ্যানেলে এই দুইখান ক্লাসিক্যাল কাহিনী দেখিয়েই যাচ্ছে তো দেখিয়েই যাচ্ছে। ছোটবেলায় আমি এইসব ধর্মীয় সিরিয়াল দেখার জন্য পাগল আছিলাম। বাবা মা আত্মীয়স্বজন সবাই এ ধর্মীয় সিরিয়ালগুলো দেখার জন্য আমার অকৃত্তিম আগ্রহের কারণে আমাকে প্রচন্ড ধার্মিক ব্যক্তি ভাবত। ওরা কখনোই বুঝত না যে আমর এসব ধর্মীয় সিরিয়াল দেখার পিছনে কোন ঈশ্বর প্রীতি বা ধর্ম আসক্তি নাই। এগুলো দেখার পিছনে কাজ করে অ্যাকশন প্রীতি এবং ফ্যান্টাসী প্রীতি। এইজন্য রামায়ণের বানর-রাক্ষস যুদ্ধ আর মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ এই দুইটা জায়গা ছাড়া আমার কাছে মহাকাব্যদুটির আর কোন কিছুই তেমন একটা ভাল লাগে না। আর এই দুইটা মহা অ্যাকশনের মধ্যেই ধর্মগ্রন্থ তথা সিরিয়াল দুটির যাবতীয় ফ্যান্টাসী লুকায়িত আছে, সেজন্যই আমি উক্ত সিরিয়াল দুটির জন্য পাগল। একারণেই আজ প্রায় চার বছর ধরে নাস্তিক হবার পরেও আমি স্টার প্লাস চ্যানেলে নিয়মিত মহাভারত টিভি সিরিয়ালটা দেখি। আজও দেখব রাত নয়টায়। আগের মত এখন হয়ত আর রামকে অবতার ভাবি না, কৃষ্ণকে মানুষরূপী ভগবান মনে করি না এবং যত রাজ্যের কর্ম বিজ্ঞান বিরোধী তার সবই অবিশ্বাস করি তবুও ছোটবেলার সেই মনটি আজও রয়ে গেছে; যে মন ফ্যান্টাসী ভালবাসে, অ্যাকশন ভালবাসে, অ্যাডভেঞ্চার ভালবাসে। আমি বেশ ভাল করেই জানি যে, হিন্দুরা যতই ঘটা করে ঐ ফাজিল কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালন করুক না কেন, সে কস্মিনকালেও ঈশ্বর বা দেবতার অবতার নয়। তবে হ্যা, তাকে অত্যন্ত ধূর্ত এবং চালাক একজন ব্যক্তি বলা যায়। সারা জীবন ধরে মানুষকে ধোকা দিয়ে গেছে যে সে ইশ্বর। অর্জুনকে উল্টাপল্টা বুঝিয়ে ওর brain wash করে ওকে দিয়ে ওর আত্মীয়স্বজনের হত্যা করিয়েছে। কত ধোকাবাজি, ছল চাতুরী করে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পান্ডবদের জিতিয়েছে। এক নম্মরের ধোঁকাবাজ এবং শয়তান হল এই কৃষ্ণ। অথচ ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা ওরে কতই না ভক্তিশ্রদ্ধা করে এই শয়তানটারে। so sad. মহাভারতে আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র হল অঙ্গরাজ কর্ণ। He was the best archer, not Arjun. I think so. কিন্তু বেচারা কর্ণ সারথি অর্থাৎ রথচালকের ছেলে হয়েও ক্ষত্রিয়দের মত ধনুর্বিদ্যা অর্জন করে তাদের মতই সম্মান প্রত্যাশা করায় তাকে শুধু অপমানই পাইতে হইছে। গুণ এবং যোগ্যতা যতই বেশী হোক না কেন, স্রেফ বংশের কারণে ধার্মিক পান্ডবরা পর্যন্ত এমনকি পবিত্র নারী হিসেবে কথিত দ্রৌপদী পর্যন্ত কর্ণকে মূল্যায়ণ করে নাই। This is not fair.
দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ আমাকে বিচলিত করে না। যে মেয়ে বংশ দিয়ে মানুষকে মূল্যায়ণ করে, যোগ্যতা দিয়ে করে না সেই মেয়েকে আমি বলব নারী জাতির কলঙ্ক। তাছাড়াও পাঁচজন স্বামী গ্রহণকারী নারীর চরিত্র যে নিম্নমানের হবে, সেটা বলাই বাহুল্য। কাজেই আমি ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি ঐ ছেরীর সাথে যেটা হইছে, সেটা কিছুই না। আরো বেশী খারাপ কিছু হওয়া উচিত ছিল এই মূর্তিমতী ডাইনীর সাথে। আমি শুধু কর্ণের অপমানেই বিচলিত হয়েছি, বেচারা সারাজীবন সম্মানের জন্য যুদ্ধ করে গেছে ( আমার মত )। মহাভারতে একমা্ত্র এবং একমাত্র যদি সম্মানের যোগ্য কোন ব্যক্তি থেকে থাকে তবে সে অবশ্যই পান্ডবদের বড় ভাই কর্ণ। আর দ্বিতীয়তে যুধিষ্ঠির, ব্যস এই দইজনই। আর কেউ না। যে কারণে আমি ঠাকুরমার ঝুলি কা্র্টুন, হলিউডের লর্ড অব দ্য রিংস, নারনিয়া, হারকিউলিস প্রভৃতি দেখতে পছন্দ করি বা দেখি ( কিন্তু বিশ্বাস করি না ), ঠিক সেই একই কারণে আমি ধর্মীয় অলৌকিক বা গাঁজাখুরি জিনিসগুলো অবিশ্বাস করলেও ধর্মীয় টিভি সিরিালগুলো দেখে থাকি। কারণ, দেখতে মজা লাগে। ব্যস, এছাড়া আর কিছুই না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন