শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৪

আইনস্টাইন বনাম চে গুয়েভারা

( মেঘনাদ সাহা – জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের অগ্রদূত, মুক্তমনা ব্লগ ) নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন মেঘনাদের তিন বছরের জুনিয়র। মেসে যাওয়া আসা ছিল তাঁর। অনুশীলন সমিতির তরুণ নেতা পুলিন দাস, শৈলেন ঘোষ, যুগান্তরের নেতা যতীন মুখার্জি- যিনি নিজের হাতে একটা ভোজালি দিয়ে বাঘ মেরে বাঘা যতীন নামে পরিচিত হয়েছেন – সবার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো মেঘনাদ সাহার। বাঘা যতীন মেঘনাদকে প্রায়ই বলতেন বিপ্লবীদের সাথে একটা দূরত্ব রেখে চলতে। কারণ দেশের কাজে শুধু বিপ্লবীদের নয় মেঘনাদের মত মেধাবী ছাত্রদেরও দরকার আছে – যারা জাতি গঠন করবেন।
---------------------------------------------------------------------
উপরিউক্ত অংশটি এইজন্য লিখলাম কেননা, ..... মানে কি বলব, কিভাবে বলব বুঝতে পারছি না। আমার খুব শখ ছিল আইনস্টাইনের ছবিওয়ালা একটা টি শার্ট গায়ে দিয়ে ঘুরে বেড়াব। অনেক দোকানে গেছি, কিন্তু পাই নাই। চে গুয়েভারা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এদের ছবিওয়ালা টি শার্টের অভাব নাই। রাস্তায় বের হলেও প্রায়ই দেখা যায় যে অনেক পোলাপান চে গুয়েভারার ছবিওয়ালা গেন্জি বা টি শার্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আবার কখনো কখনো ব্যাগের মধ্যেও চে গুয়েভারার ছবি। কিন্তু আইনস্টাইনের ছবিযুক্ত গেন্জি বা টি শার্ট বা ব্যাগ খুবই Rare. পাওয়া যায় না বললেই চলে। যদিও আমি অনেক কষ্টে প্রচুর দোকানে খোঁজাখুজি করে একটা জোগাড় করছি। তো, একটা জিনিস দেখে আমার খুব খারাপ লাগে যে, আজকাকার পোলাপানেরা ( বেশীরভাগ ) বিজ্ঞানী হতে চায় না, বিপ্লবী হতে চায়। কেন ? কে জানে ? যদি জিওনার্দো ব্রুনোর ( সৌরজগতের সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদ সমর্থনের অপরাধে যাকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল ) ভক্ত হত, তাহলে একটা কথা হত। না, সেটা হবে না, হবে কি ? চে গুয়েভারার ভক্ত। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দেয়ার চেয়ে, দেশের জন্য সমাজের জন্য জীবন দিতে বেশী আগ্রহী আজকালকার পোলাপানেরা। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। একটা সময় ছিল যখন মানুষ ভাবত যে সূর্যটা পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে। আজ বিজ্ঞানীদের কারণে সাধারণ মানুষ জানে যে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে না, বরং পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘুরে। এই সত্যটা জানাতে আমজনতার কোন লাভ হয় নাই। কেননা, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরুক আর পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরুক - যেটাই সত্য হক না কেন তাতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কোন প্রভাব পড়ছে না, আমরা প্রতিদিন সূর্যকে পূর্বদিকেই উঠতে দেখব আর পশ্চিমদিকেই অস্ত যেতে দেখব। পৃথিবীর আবর্তন ও পরিক্রমণের আবিস্কার আর মানবিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মানুষের আত্মবলীদানের আদর্শ এ দু'টোকে যে পাশাপাশি রখে বিচার করা উচিত - সেটা অনেকেই বুঝে না। মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ বসু এরা ভারতবর্ষকে ইংরেজ শাসনের প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য, দেশের স্বাধীনতার জন্য যতই আন্দোলন করুক না কেন; মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বোস, জগদীশ চন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এনারা কেউই এসব ব্যাপারে not interested. এনারা এদের সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে, ব্যাক্তিগত সাফল্যের মাধ্যমে নিজের দেশ, জাতি ও সমাজের সম্মান বৃদ্ধি করছে। যাদের মেধা নাই, তাদেরই একমাত্র সম্বল হয়েছে দেশপ্রেম। আবার যদি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়, আমি তো কক্ষনো যুদ্ধে অংশ নিব না। আমি এইসব ঝামেলার মধ্যে নাই। তার মানে কি ? আমি স্বদেশকে ভালবাসি না ? উহু, ব্যাপারটা এরকম না। ব্যাপারটা হল যে, আমি অবশ্যই নিজের জন্মভূমিকে ভালবাসি কিন্তু আমার ভালবাসার পরিধিটা অনেক বিশাল, এতই বিশাল যে এটা শুধু ''বাংলাদেশ'' নামক নির্দিষ্ট একটা আবদ্ধ ক্ষেত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। এটা সমগ্র পৃথিবীব্যাপী, তার চেয়েও বিশাল - লক্ষ কোটি আলোকবর্ষব্যাপী। আমি মনে করি যে শুধু বাংলাদেশই আমার জন্মভূমি না, সমস্ত পৃথিবী; পৃথিবী কি বলি সমগ্র সৌরজগৎ এমনকি আকাশগঙ্গা ছায়াপথ পর্যন্ত আমার জন্মভূমি। কারো কোন সমস্যা আছে ? কাজেই আমার দেশের সাথে অন্য দেশের লড়াই লাগলে আমি এটাই ভাবব যে, আমার জন্মভূমির একটা অংশের সাথে আরেকটা অংশের লড়াই লাগছে। so, এক্ষেত্রে আমি নীরব দর্শক। তাছাড়া, পৃথিবীতে এই যে দেশভিত্তিক ব্যাবস্থা এটাও আমর পছন্দ না। এতগুলো দেশ বা এতগুলো রাষ্ট্র কেন থাকবে ? পৃথিবীর সবদেশ মিলিয়ে একটামাত্র বিশ্বরাষ্ট্র গঠন করলে সমস্যা কি ? হ্যা, পৃথিবীতে কোনদিন alien attack হয়, ভীনগ্রহী প্রাণীরা মানবজাতিকে ধ্বংশ করতে উদ্যত হয়, সেক্ষেত্রে সমগ্র মানবজাতিকে বাঁচানোর জন্য, পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য action এ যেতে রাজি আছি, জীবন টিবন বিসর্জন দিতে রাজী আছি। হতে পারে আমি বাংলাদেশের মাটিতে জন্মেছি, কিন্তু আমার দেহের প্রতিটি পরমাণু অতি উচ্চভরবিশিষ্ট তারার অগ্নিগর্ভ থেকে আসছে সুপারনোভা বিস্ফোরণের ফলে। এর মানে কি ? আমি নক্ষত্র সন্তান। আমার জীবনের উপাদানগুলো মহাকাশে সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই, সমগ্র মহাবিশ্ব অর্থাৎ পুরো বিশ্বব্রহ্মান্ডই আমার Birthplace. That's why, আমি যেখানেই মারা যাই না কেন, আমার কক্ষনো এই আফসোস হবে না যে আমি আমার দেশের মাটিতে মরতে পারলাম না। যাই হোক, আমি শুধু আমি না আমরা সবাই মহাবিশ্বর অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজেই, নির্দিষ্ট ভূখন্ডের জন্য জীবন বিসর্জন দেয়ার কোন মানে হয় না। অন্তত আমার তাই মনে হয়। ''সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগ স্বীকার করার চাইতে, দেশের জন্য সমাজের জন্য আত্মত্যাগ করতেই বেশী আগ্রহী আজকালকার পোলাপানেরা'' - এই ব্যাপারটা আমার কেন জানি ভাল লাগে না। ফিজিক্সে পড়ুয়া ছেলে পর্যন্ত চে গুয়েভারার সিল বুকে লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। দেখলেই মেজাজ খিচড়ে যায় যে, বিজ্ঞানী হওয়ার চেয়ে বিপ্লবী হওয়াতেই বেশী interest. যত্তোসব। এক্কেবারে অসহ্য লাগে। এই জন্যই আমি প্রথমেই বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার জীবনীর অংশবিশেষ তুলে ধরলাম। এটা খাঁটি সত্যি কথা যে, মেধাবী ব্যাক্তি বা জিনিয়াস ব্যক্তি ( আইনস্টাইনের মত ) কখনোই বিপ্লবী হবে না। আজকালকার পোলাপানদের অবস্থা এমন হইছে যে, যদি কাউকে বলা হয় ''এই অংকটা করে দে, তানাহলে এক কোপে তোর মাথা ধড় থকে আলাদা করে দিব।'' তাহলে তারা মৃত্যুকে স্বীকার করে নিবে কিন্তু অংক করতে সাহস করবে না। দশজন মারদাঙ্গাবাজ ছেলের সাথে মারামারি করার সাহস আছে কিন্তু ফিজিক্সের বা ম্যাথের কোন সূত্র আবিস্কারের জন্য চেষ্টা করার সাহস নাই। হায়রে !

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন